Monday, April 6, 2009

patwary











বাংলা নববর্ষ ১৪১৬

নববর্ষের প্রথম প্রহরে যখন পাহাড়ের ঢাল ঘেসে সূর্যের আলো এসে চোখের 'পরে পড়লো, তখন এই হাজার মাইল দূরের নির্জন দ্বীপ দেশটিকেও কেন যেন আমার বাংলা মায়ের মতই লাগছিল। কিন্তু খানিক পরেই ব্যাস্ত নগরীর চিরায়িত কোলাহল আমাকে কেবলই দূরে নিয়ে যেতে শুরু করলো। বোধ্য এবং দূর্বোধ্য ভাষার মিশ্র কথোপোকথন আর বিদ্যুতের মত ব্যাস্ত জীবন নববর্ষের শেষ আবেগটুকুও নিংড়ে নিতে সময় নেয়নি। পুনঃপ্রবেশের ভিসা নেয়ার জন্য আমি যখন দৌড়াচ্ছিলাম ভিসা অফিস আর ব্যাঙ্কের পথে পথে, তখন বুঝি আমার প্রিয় বাংলায় আমারই স্বজনেরা ইলিশের সাথে শখের পান্তা মিশিয়ে এই বিশেষ দিনটিকে আপন করে নিচ্ছিল। দুপুর বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেতে চাউমিন আর থাই চিকেনের লাঞ্চ মেনুটাকে দেখতে দেখতে হাসছিলাম। শেষ বেলায় এই কি তবে পান্তা ইলিশের বিকল্প! ফেইসবুকের কল্যানে দূরত্বটা এখন অনেক কমে এসেছে। একে একে সবাই যখন ঘরে ফিরে নিজের কম্পিউটার নামক প্রিয়তমার সাথে সময় কাটাতে শুরু করে, আমিও সংবাদ পেতে থাকি কোথায় কি হচ্ছে। শুনে বেশ ভালো লাগলো যে এবারের পহেলা বৈশাখ অনেক বড় করে পালন করা হয়েছে। যখন দেখতাম ভ্যালেনটান্স ডে-এর নামে নোংড়া ইন্দ্রিয়গুলোকে উন্মুক্ত করার প্রতিযোগীতা হতো, খারাপ লাগতো। উন্নত বিশ্বে ভ্যালেনটাইন্স ডে প্রতিক্ষনে এরা পালন করে। মাঝে মাঝে যখন দেখি উগ্র কামনায় ছটফট করা রাস্তার কুকুরগুলোর মত ছেলেগুলো লোভাতুর চোখে ভালোবাসার নামে জড়িয়ে ধরে মেয়েগুলোকে চুম্বনে ভিজিয়ে দিচ্ছে, তখন কুকুর আর মানুষে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। একই চিত্র যখন স্বজাতির মাঝে দেখতে শুরু করি তখন কষ্ট লাগে। কিন্তু আজকের এই বিশেষ দিনটি কষ্টকে কমিয়েছে অনেক। শুনেছি আজও অনেক ভালোবাসার মেলা বসেছিল মানুষের মনে। কিন্তু তবুও সে মেলায় ছিল আপন অনুভুতি। আজ যদি কোন ছেলে তার ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়েও ধরে, আমি নিশ্চিত সে আলিঙ্গনে পাশ্চাত্যের নোংড়ামীর থেকে নিজ সংষ্কৃতির ভালোবাসার পরশ ছিল অনেক বেশি। অন্তত শাড়ীতে ভালোবাসার মানুষকে জড়িয়ে ধরার সুযোগ বঙ্গদেশে এখন কমই হয়! আরেকটা বিশেষ ব্যাপার আমাকে নাড়া দিয়েছে। শুনতে পেলাম কট্টর-ইসলামী দলগুলো নাকি নববর্ষ পালন করেছে। যদিও গুজব আছে সেনাপ্রধানের চক্ষু রাঙানির ফসল এই নববর্ষ উজ্জ্বাপন। তবুও ভালো লেগেছে, কারন নববর্ষের অনুভুতিটা কেমন সেটা তাদের অন্ধ বিবেকগুলো অন্তত একবারের জন্য হলেও দেখতে পেলো। মাঝে মাঝে মনে হয়, ইসলামতো আমাদের ভাত খাওয়া বন্ধ করে রুটি আর দুম্বার মাংশ খেতে বলছে না। সাধারন কাপড় ছেড়ে আরবীয় আলখাল্লাও পড়তে বাধ্য করছে না। তবে কেন আমাদের সংষ্কৃতি পালনে বাধা দিবে? এই মানুষগুলো এটা বোঝে না যে যুগযুগ ধরে গড়ে ওঠা এই ঐতিহ্য আমাদের অহঙ্কার, বোঝা নয়। ইসলাম এখানে কোন বাধা নয়। আর এই যে বাংলা নববর্ষ, এর প্রচলন কে করেছে সেটা কি তারা জানে? সম্ভবত না। বাংলা নববর্ষের প্রচলন সম্রাট আকবরের হাতে এবং এই বছর গননা শুরু হয়েছিল শুন্য বা এক থেকে নয় বরং সেই বছরের হিজরী সন থেকে। অন্ধের মত বিরোধীতা করার থেকে খানিকটা পড়াশোনা করে বিতর্ক করলে সমস্যাটা কোথায়? অন্তত কোরানের প্রথম বানীকেতো শ্রদ্ধা দেখানো হবে। আজ ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বড় করে নববর্ষ পালন করা হয়েছে। শুনে বেশ ভালো লাগলো, আবার আফসোসও হলো। দেশে থাকলে কত মজা করা যেত। মাঝে মাঝে মনে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের স্মৃতিগুলো। সেই আনন্দের মুহুর্তগুলো। নিজের দেশ, নিজের মাটির স্পর্ষই অন্য রকম। একই দিন, কেবল মাটির বিভিন্নতায় কত অন্যরকম হয়ে যায়। এ বৈশাখকে স্বাগত জানিয়ে রবিঠাকুর লিখেছিলেন "এসো হে বৈশাখ এসো এসো"। এ যেন সকল গ্লানি আর ক্লান্তিকে ধুয়ে ফেলে নুতন বছরকে নুতন করে শুরু করার আহবান। বাংলা সাহিত্যের আরেক নক্ষত্র, নজরুল লিখেছিল "ঐ নুতনের কেতন ওড়ে কাল বৈশাখীর ঝড়"। সকল পুরোনো ব্যার্থতা আর হতাশাকে পেছনে ফেলে এই হোক আজকের প্রত্যাশা যে আমরা একটা নুতন দিন গড়বো অনাগত ভবিষ্যতের জন্য। সবাইকে শুভ নববর্ষ। ১৪ এপ্রিল ২০০৯(পহেলা বৈশাখ ১৪১৬)








বাংলা নতুন বছরে সবার জীবন আরো সমৃদ্ধ হোক….

সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।




আব্দুল কাদির জিলানী পাটোয়ারী