Sunday, March 28, 2010

লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে হলুদ

লিভারের রোগ প্রতিরোধ করে হলুদ

কাবুল -তরকারির সাধারন উপকরণ হলুদের মধ্যে এমন একটি উপাদান পাওয়া গেছে যা লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি কমায়। বুধবার অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানীরা একথা জানিয়েছেন।

গাট নামক একটি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞানীরা ইদুরকে কারকুমিন নামের এ উপাদান খাইয়ে দেখেছেন যে তা নষ্ট হয়ে যাওয়া, ব্লক ও ক্ষতযুক্ত লিভার কোষের প্রদাহ কমায়।

কারকুমিন উপাদানের কারণেই হলুদের রং উজ্জ্বল হলুদ। এর রোগ প্রতিরোধক গুণ রোগের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়ক হতে পারে--এমন আভাস মিলেছিল আগের কয়েকটি গবেষণাতেই।

অন্য কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার পরে কারকুমিন দ্রুত ক্যান্সার প্রতিরোধক কার্যকারিতা হারাতে থাকলেও এটি ক্যান্সার টিউমার প্রতিরোধ করে। আর যারা বেশি বেশি হলুদ দেওয়া তরকারি খায় তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।

অস্ট্রিয়ার গ্রাজ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোলজি ও হেপাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক মাইকেল ট্রানারের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল চার কিংবা আট সপ্তাহ ধরে খাবারের সঙ্গে কারকুমিন দেয়ার আগে ও পরে যকৃতের প্রদাহে আক্রান্ত ইদুরের কোষ ও রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে যে ফল পেয়েছেন তাতে দেখা গেছে, কারকুমিন খাওয়া ইদুরগুলোর যকৃতের ব্লক কমাসহ কোষের ক্ষতও কমেছে।

কলকাতায় ব্যাংক এ মিলবে মায়ের বুকের দুধ

কলকাতায় ব্যাংক এ মিলবে মায়ের বুকের দুধ সুব্রত আচার্য্য, কলকাতাসন্তান জন্ম দেওয়ার সময় মা মারা গেলেন। ভূমিষ্ঠ শিশুটি ক্ষুধায় ছটফট করছে। এই মুহূর্তে তার সবচেয়ে দরকার মায়ের দুধ। এখন কী হবে? এ রকম পরিস্থিতি ও মায়ের দুধের অভাবগ্রস্ত শিশুদের কথা চিন্তা করে ভারতে মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। প্রথম ব্যাংকটি হতে যাচ্ছে কলকাতার সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমে। এ উদ্যোগ বিশ্বে নতুন না হলেও উপমহাদেশে প্রথম বলে দাবি করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।
'
শেঠ সুখলাল করোনারি মেমোরিয়াল হাসপাতাল' (এসএসকেএম), যেটি পিজি হাসপাতাল নামেও পরিচিত, এর শিশু বিভাগে এই ব্যাংক স্থাপনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত। এটা সফল হলে রাজ্যের ১৮ জেলা শহরের প্রধান প্রধান সরকারি হাসপাতালেও তা স্থাপন করা হবে। পিজি হাসপাতালের ম্যাটারনিটি বিভাগে ৫০টি আসন রয়েছে।
প্রতিদিন সেখানে গড়ে ৪০টি শিশু থাকে। ওই শিশুদের কারো যদি মায়ের মৃত্যু হয় বা মায়ের পর্যাপ্ত দুধ না হয় তাহলে শিশুকে হাসপাতালের ব্যাংক থেকে দুধ এনে খাওয়ানো হয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় মৌখিকভাবে অনাপত্তির কথা জানিয়েছে।
হাসপাতালের সুপার ডা. দেবাশীষ ভট্টাচার্য বলেছেন, 'যে মায়েরা সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ানোর পরেও অনেক দুধ উদ্বৃত্ত থাকে বলে মনে করেন, মূলত তাদেরই ব্যাংকে দুধ দান করায় উসাহিত করা হবে। কিংবা মনে করেন, যেসব সন্তান বুকের দুধ কম খেতে চাইছে, তাদের মায়েরাও দুধ ব্যাংকে দান করতে পারেন।' তিন বলেন, 'রক্তদানের মতোই সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এ ব্যাপারে জনমত তৈরি করা হবে।'
মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার চিন্তার সঙ্গে জড়িত এসএসকেএমের নবজাতক বিভাগের প্রধান ডা. অরুণ সিং বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, সিজারিয়ান পদ্ধতিতে শিশু ভূমিষ্ঠ হলে কিংবা কোনো কারণে শিশু অসুস্থ হলে তাদের কৌটার দুধ দেওয়া হয়_ এটা শিশুর পক্ষে ভালো নয়। সুস্থ মায়ের বুকের অতিরিক্তি দুধ প্রয়োজনে পাম্প করে বের করে দেওয়া হয়। মা যদি রাজি হন, তবে ওই দুধও ব্যাংকে দান করতে পারেন। যেটা পরে অন্য শিশু খেয়ে বাঁচতে পারবে।'
তিনি জানান, ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওই বুকের দুধ সংরক্ষিত থাকবে। এভাবে কমপক্ষে এক বছর দুধ সংরক্ষণ করে রাখা যাবে।
হাসপাতালের পরিচালক ডা. প্রদীপ কুমার মিত্র জানান, নরওয়ে থেকে আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ চিকিসক দল আগামী সপ্তাহে কলকাতা আসছে। তারা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য যাবতীয় ধারণা দেবে, তারপরই কাজ শুরু হবে। হাসপাতালে ম্যাটারনিটি বিভাগের ১৪ নম্বর বেডে শুয়ে থাকা সদ্য পুত্রসন্তানের জননী পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাতৃদুগ্ধ ব্যাংক গঠনের কথা শুনে বললেন, 'এ ধরনের উদ্যোগ খুবই ভালো। মায়ের দুধের বিকল্প নেই। সদ্যজাতদের যেসব মায়ের দুধ কম হয়, তাদের জন্যও যেমন দরকার হবে ব্যাংক, আবার যে মায়েদের বুকের দুধ উদ্বৃত্ত থাকে, তাঁরাও দান করতে পারেন।

Wednesday, March 17, 2010

আমেরিকানদের চাকরির অভাব কেন?

আমেরিকানদের চাকরির অভাব কেন?

জর্জ বুশ
ভারত সফরকালীন সময়ে আবুল কালামের চা পানের আমন্ত্রণ গ্রহন করেন।

এ অনুষ্ঠানে কালাম -কে জর্জ বুশ প্রশ্ন করলেন- "আপনার নেতৃত্বের তত্ত্ববিদ্যা/ দর্শন কি?"

কালাম বললেন- "আমার নেতৃত্বের তত্ত্ববিদ্যা হলো - বিচক্ষণ ব্যক্তিরা সর্বসময় আমার চারপাশে বিরাজ করছেন।"

জর্জ বুশ বললেন- "আপনি কিভাবে বুঝলেন তারা বিচক্ষণ?"

কালাম বললেন, "সঠিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে এটা বুঝা যায়" এবং তিনি প্রমান দেখাতে চাইলেন।
ক্ষণা বুশ দেখলেন কালাম, মনমোহন সিংকে ফোন করলেন এবং বললেন-

"
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুগ্রহ করে আমার প্রশ্নটির উত্তর দিন।

তোমার মায়ের একটি সন্তান আছে

এবং

তোমার বাবার একটি সন্তান আছে

এবং

সে সন্তান তোমার ভাই বা বোন নয়, সে কে" ?



মনমোহন
দ্রুত জবাব দিলেন-"স্যার, সে আমি।"

কালাম বললেন- "উত্তর সঠিক হয়েছে।"
অতঃপর মনমোহনকে ধন্যবাদ জানিয়ে কালাম তার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। ফোনের রিসিভার যথাস্থানে রেখে কালাম বললেন-"মিঃ বুশ, আপনি কি কিছু অনুধাবন করতে পেরেছেন ? "

বুশ মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দিলেন- " হ্যাঁ, মিঃ প্রেসিডেন্ট। অনেক ধন্যবাদ। আমি নিশ্চিত ভাবে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে দেখব।"

সফর শেষে ওয়াশিংটনে ফেরার পর বুশ সিদ্ধান্ত নিলেন কন্ডোলিসা রাইস -কে তিনি পরীক্ষা করে দেখবেন।
তিনি, রাইসকে হোয়াইট হাউজে তলব করলেন।

বুশ, রাইসকে বললেন- "তুমি আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?"

কন্ডোলিসা রাইস বললেন -" স্যার, অবশ্যই আমি উত্তর দিবো । বলুন কি প্রশ্ন ?"

বুশ প্রশ্নটি উথ্থাপন করলেন- " উহ্ হ্ তোমার মায়ের একটি সন্তান আছে এবং তোমার বাবার একটি সন্তান আছে এবং সে সন্তান তোমার ভাই বা বোন নয়, সে কে" ?

রাইস প্রশ্নটি শুনে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন ।
রাইস বুশকে উদ্দেশ্য করে বললেন-" এ ব্যাপারে আমি কি চিন্তা করার কিছু সময় পাব?"

বুশ রাজি হলেন। রাইস বিদায় নিয়ে চলে এলেন।

রাইস তক্ষণা বয়োজেষ্ঠ্য সিনেটরদের সভা আহ্বান করলেন। কিন্তু তারাও এ প্রশ্ন শুনে হতবুদ্ধি হয়ে পড়লেন এবং কয়েক ঘন্টা কেটে গেলো কেউ কোন উত্তর দিতে পারলেন না।

অবশেষে হতাশ কন্ডোলিসা, কলিন পাওয়েল-কে আহ্বান করলেন এবং সমস্যা উপস্থাপন করলেন -" মিঃ পাওয়েল, তোমার মায়ের একটি সন্তান আছে এবং তোমার বাবার একটি সন্তান আছে এবং সে সন্তান তোমার ভাই বা বোন নয়, সে কে" ?


পাওয়েল দ্রুত উত্তর দিলেন- " অবশ্যই, সে আমি।"



রাইস নিশ্চিন্ত হলেন এবং তাড়াহুড়ো করে হোয়াইট হাউসে এসে বুশের খোঁজ করলেন।
বুশকে দেখে রাইস চিকার করে বললেন-
"
আমি প্রশ্নের উত্তর জানি, স্যার।
আমি জানি সে কে ?

সে আমাদের কলিন পাওয়েল।"



বুশ নিদারুন বিরক্তি নিয়ে প্রতি উত্তর দিলেন-

"ভুল,



সে মনমোহন সিং।"




(
ই-মেইলে ইংরেজী এই কৌতুকটি পেলাম। মূলভাব ঠিক রেখে কৌতুকটি বাংলায় লিখে দিলাম। বর্তমানে আমেরিকানদের চাকরী ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা - এ বিষয়টির উপর ভিত্তি করে এই কৌতুকটি রচিত হয়েছে। )

Enjoy
( Why are Americans jobless? )

While visiting India, George Bush is invited to tea with Abdul Kalam.

He asks Kalam what his leadership philosophy is.
He says that, it is to surround himself with
intelligent people.

Bush asks how he knows if they're intelligent.

"I do so by asking them the right questions," says
Kalam. "Allow me to demonstrate."

Bush watches as Kalam phones Manmohan Singh and says,

"Mr. Prime Minister, please answer this question:

Your mother has a child,

and

your father has a child,


and

this child is not your brother or sister.

Who is it?"

Manmohan comimmediately responds,
"It's me, Sir !"

"Correct. Thank you and good-bye" says Kalam. He hangs
up and says," Did you get that, Mr. Bush?"

Bush nods: "Yes Mr. President. Thanks a lot.

I'll definitely be using that!"


Bush, upon returning to Washington, decides

he'd better put Condoleezza Rice to the test.
Bush summons her to the White House and says,
"Condoleezza, I wonder if you can answer a question for me."

"Why, of course, sir. What's on your mind?"

Bush poses the question: "Uhh, your mother has a
child, and your father has a child, and this child is not
your brother or your sister. Who is it?"

Rice was puzzled and finally asks, "Can I think about
it and get back to you?" Bush agrees, and Rice leaves.

Rice immediately calls a meeting of senior senators,
and they puzzle over the question for several hours,
but nobody can come up with an answer.. Finally,
in desperation,
Rice calls

Colin Powell
and explains the problem.

"Mr. Powell, your mother has a child, and your father
has a child, and this child is not your brother or your sister.
Who is it?"
Powell answers immediately, "It's me, of course."

Much relieved, Rice rushes back to the White House,
finds George Bush, and exclaims,

"I know the answer, sir! I know
who it is!
It's our Colin Powell!"

And Bush replies in disgust,

"Wrong,

it's Manmohan Singh!"

Wednesday, March 10, 2010

শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মারক ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ



শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মারক ভাস্কর্য ও স্মৃতিসৌধ


আজিজুল কদির


জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনির মধ্য দিয়ে জন্ম হলো একটি দেশ ও জাতির এবং সেই বিজয় ইতিহাসে ৩০ লক্ষ্য প্রাণের বিনিময়ের এক অমর বীর গাঁথা। আর সেই মুক্তিযুদ্ধে বাংলার চারু শিল্পীরা এক সাথে শুধু হাতিয়ার নিয়ে যুদ্ধ করেনি, স্বদেশকে শত্রু মুক্ত করার জন্য রংতুলি, ক্যানভাসে যুদ্ধকালীন সময়ে জন সম্মুখে শিল্পকর্ম রচনা করে জন সচেতনতা বাড়িয়ে তোলে। এর পরবর্তীতে অর্থা দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে দেশের আনাচে কানাচে মহান স্বাধীনতার স্বপক্ষে উজ্জীবিত হয়ে গড়ে তোলে বেশ অনেকগুলো ভাস্কর্য। তারই কিছু নিদর্শন এখানে তুলে ধরা হলোঃ


অপরাজেয় বাংলা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের সামনের চত্বরে অপরাজেয় বাংলার অবস্থান। সাড়ে সতের ফুট উচ্চতার এই কংক্রিটের স্মৃতিসত্মম্ভ অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদীদের আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টসের শিক্ষক সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালেদ এই ভাস্কর্যের অমর স্রষ্টা। এ ভাস্কর্যটির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের একটা সার্বিক রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতিকৃতিতে দাঁড়ানো তিনজন মুক্তিযোদ্ধার একজন গ্রামের যুবক। যার বাম হাতে গ্রেনেড ডান হাতে রাইফেল। অন্য প্রতিকৃতিটি রাইফেল হাতে দাঁড়ানো একজন ছাত্রের। সবশেষ মূর্তিটি একজন সেবিকার যিনি ফাষ্ট এইড কাঁধে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা করেন। মূলত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন কিছু সৃষ্টির তাগিদ থেকেই শিল্পী এটা তৈরী করেছিলেন। এটা তৈরীর মূল উদ্যোক্তা ছিলেন ডাকসুর সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক . হামিদ। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা এর ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করেছিলেন। ভাস্কর্যটির তৈরীর মডেল হিসেবে কাজ করেছিলেন সৈয়দ হামিদ মাকসুদ, বদরুল আলম এবং ফাল্গুনী হামিদ।


শহীদ মিনার


মহান ভাষা আন্দোলনের স্মারক শহীদ মিনার। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের উত্তর-পশ্চিম পাশে ভাষা শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার। বাংলাদেশে যত স্মৃতি ভাস্কর্য আছে তার মধ্যে এই শহীদ মিনারের ওপর দিয়েই ধকল গেছে সবচেয়ে বেশি। স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুর দিকগুলোতে স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি যখন শুরু হয় তখনই পাকিসত্মানি হানাদার বাহিনী কয়েকবার এটি ভেঙে দেয়। ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে ঘাতকের বুলেটে নিহক হয়েছিলেন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকতসহ আরো কয়েকজন। যে স্থানে এর শহীদ হয়েছিলেন সেখানেই এটি নির্মিত হয়েছিল। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের পরিকল্পনা, স্থান নির্বাচন ও নির্মাণের সমন্বয়ে প্রথম এটার কাজ শুরু হয় ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। ২৬ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন এটি উদ্বোধন করার পর পরই পাকিসত্মান সরকারের পুলিশ এটি ভেঙে দেয়। ১৯৬৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বার শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রসত্মর স্থাপন করেন তকালীন মুখ্যমন্ত্রী আবু হোসেন, মওলানা ভাসানী এবং শহীদ বরকতের মা হাসিনা বেগম। এরপর শিল্পী হামিদুর রহমান নিজস্ব নকশা ও পরিকল্পনায় ১৯৫৭ সালে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৮ সালে সামরিক সরকার এই কাজ বন্ধ করে দেয়। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিসত্মানি সামরিক জান্তা পনরায় এটি ভেঙে দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর ১৯৭২-এ আবারো শহীদ মিনারের মূল নকশার সাথে সূর্যের মতো লাল বৃত্ত সংযোগ করেন শিল্পী মুসত্মাফা মনোয়ার। ১৯৮৩ সালে নির্মিত চত্বরটিই বর্তমানের রূপ নিয়ে টিকে আছে। এখানেই ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের স্মরণে পুপার্ঘ্য অর্পণ করা হয়। দাবি আদায়, প্রতিবাদ সংগ্রামে শহীদ মিনার চত্বর হয়ে উঠেছে মূল কেন্দ্র। চট্টগ্রামে নগরীর মুসলিম হলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শহীদ মিনার ।


জয় বাংলা, জয় তারুণ্য


টিএসসি ও শামসুন্নাহার হলের মাঝামাঝিতে জয় বাংলা, জয় তারুণ্য ভাস্কর্যটির অবস্থান। ১৯৯৩ সালে শহীদ মিজানের মা এটি উন্মোচন করেন। এতে কোনো একজন নয় বরং স্বাধীনতা উত্তরকালে শহীদদের স্মৃতির প্রতি এই ভাস্কর্যটি উসর্গ করা হয়েছে। আলাউদ্দিন বুলবুলের তৈরি এই ভাস্কর্যটি তৈরি হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে।


শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশে নির্মিত সত্মম্ভ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে ভাস্কর্যের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে দুটি আছে শহীদদের প্রতি উসর্গকৃত। এর একটি ২৫ মার্ছ কালরাতে একাত্তরে শহীদ হরের শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীদের উদ্দেশে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রয়েছে মধুসূদন দে স্মৃতি ভাস্কর্য, শহীদ মৃণাল বোস ফোয়ারা, শহীদ আসাদ আহমেদ মুন্না স্মৃতিসত্মম্ভ, ক্যাডেট রুমী ভাস্কর্য ইত্যাদি।


স্বোপার্জিত স্বাধীনতা


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে টিএসসির সামনে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা ভাস্কর্যটির অবস্থান। মুক্তিযুদ্ধ, বিপ্লব, আত্মসমর্পণ, নারী নির্যাতন, যুব ও বুদ্ধিজীবী হত্যাকে স্মরণ করে ভাস্কর শামীম শিকদার স্বোপার্জিত স্বাধীনতা তৈরি করেন। বিভিন্‌ প্রতীকী চিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এখানে লেখা আছে বিভিন্ন ধরণের উক্তি। নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই ইত্যাদি।


স্বাধীনতা সংগ্রাম


উদয়ন স্কুল ও সলিমূল্লাহ হলের মাঝে অবস্থিত এই বিশাল স্থাপত্য শিল্পটি বাংলার কৃতি সনত্মানদের প্রতিকৃতির সমন্বয়ে গঠিত। সবচেয়ে বড় প্রতিকৃতিটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের আদলে তৈরী। এছাড়া কবি সুকানত্ম, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসুদন দত্ত, মহাত্মা গান্ধীসহ গ্রাম বাংলার নানা পেশার মানুষের প্রতিকৃতি রয়েছে এখানে। এই ভাস্কর্যটি দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করেছেন শিল্পী শামীম শিকদার। এর ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছেন।


মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি


পুরান ঢাকায় অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রবেশপথে মুক্তিযুদ্ধের প্রসত্মুতি শীর্ষক ভাস্কর্যটির অবস্থান সিমেন্টের তৈরি বিশাল আকৃতির দুটো ভাস্কর্য তৈরি করেন শিল্পী রাশা। এতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির বিভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।


সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ


মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর শহীদ সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের মোজাইক ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছে ঢাকার বিজয় সারণিতে। শিল্পী সৈয়দ লুফুল হকের তৈরি এই ম্যুরালগুলোতে শহীদ মতিউর রহমান, শহীদ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, শহীদ আব্দুর রউফ, শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ, শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমীন, শহীদ মোসত্মফা কামাল, শহীদ হামিদুর রহমানের অবিকল চিত্র ফুটিয়ে তোল হয়েছে।


মুক্তি চাই, স্বাধীনতা চাই


ঢাকার বিজয় সারণিতে মোজাইকের তৈরি ম্যুরালমুক্তি চাই স্বাধীনতা চাইভাস্কর্যটির অবস্থান। এতে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার হাতে মুক্তিকামী মানুষের মিছিলকে মোজাইকের ছোট ছোট টুকরো দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে। এটি তৈরি করেছেন সৈয়দ লুফুল হক।


একাত্তরের গণহত্যা


মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যাকে ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন ভাস্কর রাশা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মুক্তিযুদ্ধের এই বিশাল স্মারক ভাস্কর্যের অবস্থান।


ভাস্কর্য


ঊনসত্তরের স্বাধিকার আন্দোলনের বীর সৈনিক শহীদ আসাদের শার্ট নিয়ে নির্মিত ভাস্কর্য নামের শিল্প কর্মটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে অবস্থিত। এর ভাস্কর প্রদ্যুত।


শিখা চিরন্তন


জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তকালীন রেসকোর্স বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে লাখ লাখ জনতার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামএকই জায়গায়৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। এই স্থানটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শিখা চিরনত্মন স্থাপন করা হয়। কিন্তু এর নির্মাণ কাজ আজও শেষ হয়নি।


বিজয়


রামপুরায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে বিজয় ভাস্কর্যটি। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে স্বাধীনতার পতাকা যেটি কাঠ খোদাই করে তৈরি। এটি তৈরি করেছেন ৪ জন দেশবরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী, সৈয়দ লুফুল হক, রেজাউন নবী ও আব্দুস সাত্তার। লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই ধাতব তৈরি ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। শাহবাগের বাংলা একাডেমী চত্বরে এটির অবস্থান। লুঙ্গিপরা একজন মুক্তিযোদ্ধার হাতে একটি রাইফেল বীরত্বপূর্ণ ভঙ্গিতে তুলে ধরা।


মৌচাক সড়কদ্বীপের স্মৃতিসৌধ


ঢাকার রামপুরা মৌচাক সড়কদ্বীপে মুক্তিযুদ্ধে নিহত দুজন শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকায় হরতাল ও টিভি ভবন ঘেরাও কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আবুজর গিফারী কলেজের ছাত্র ফারুক ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা শহীদ তসলিমও ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর শহীদ হন। এখানেই দুজনকে সমাহিত করা হয়েছে।


স্মারক ভাস্কর্য


কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের সামনে চমকার দৃষ্টিনন্দন একটি স্মারক ভাস্কর্য রয়েছে। এতে বিভিন্ন বিষয় প্রতীকের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।


বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ফোয়ারা


ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার ফোয়ারা। গুলিসত্মান এলাকায় অবস্থিত সাতটি পাতা ও ফুলের পাপড়ি সমৃদ্ধ এই ভাস্কর্যটিতে ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠের বীরত্বের কথাই তুলে ধরা হয়েছে। এটি নির্মাণ করেন স্থপতি সিরাজুল ইসলাম।


লা-গোয়ের্নিকা বাংলাদেশ


মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রাঙ্গণে অবস্থিত ভাস্কর্যটির ভাস্কর শামীম শিকদার। সিমেন্টের তৈরি প্রতীকী চিত্র সংবলিত এই ভাস্কর্যটি।


শিখা অনির্বাণ


ঢাকা ক্যান্টমেন্ট এলাকায় অবস্থিত শিখা অনির্বাণ। এখানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মরণে নির্মিত এই ভাস্কর্যটিতে সারাক্ষণই আগুনের শিখা প্রজ্বলিত হয়। চিরদিন এ শিখা জ্বলবে- এ উদ্দেশ্যে নির্মিত শিখা অনির্বাণ বাঙালিদের একটি গৌরবের বিজয় সত্মম্ভও বটে।


মুক্তিযুদ্ধে শহীদ যারা


ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনের মধ্যে অবস্থিত বিশাল আকৃতির স্মৃতিসত্মম্ভটি দূর থেকেই চোখে পড়ে। নিচে গম্বুজ আকৃতির ভেতরে উপর এই স্মৃতিফলকটির নিচের দিকে শ্বেতপাথরের ফলকে শহীদদের দীর্ঘ নামের তালিকা রয়েছে। এতে ২৫ মার্চের ভয়াল রাতে নিহত পুলিশ সদস্যদের বীরত্বগাথা ফুটে উঠেছে।


সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ


ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে সাভারের নবীনগরে স্বাধীনতা যুদ্ধের লাখো শহীদের ত্যাগ ও সাহসিকতার বিজয়ের প্রতীক সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ। কংক্রিট নির্মিত সাতটি সত্মম্ভের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। মূল সৌধ বাদে অন্যান্য স্থাপনা লাল ইটের তৈরি। সৌধের সামনে রয়েছে গণকবর ও কৃত্রিম জলাশয়। সৌধ এলাকাটির ২৪ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে মনোমুগ্ধকর সবুজ বনানী ও লেক। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে এটি উদ্বোধন করেন। দেশের রাষ্ট্রীয় দিনগুলোতে এখানে শহীদদের স্মরণে পুস্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।


মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ


২৫ মার্চের পর থেকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পর্যনত্ম পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে মিরপুর এক নম্বর মাজার রোডে নির্মাণ করা হয়েছৈ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। মূল স্মৃতিসৌধটি লাল ইটের চারটি বেদি নিয়ে নির্মিত। বেদির সামনে একটি খাড়া সত্মম্ভে খোদাই করা আছে এর উদ্বোধনের তারিখ। রয়েছে কৃত্রিম জলাশয়, সৌধের একপাশে রয়েছৈ জাতীয় নেতা, বুদ্ধিজীবী আর সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের কবর। স্মৃতিফলক চমকার একটি বাণী উকীর্ণ রয়েছে।


উদয়ের পথে শুনি কার বাণী


ভয় নাই ওরে ভয় নাই


নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান


ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।


রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ


নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে দাঁড়ানো পাকিসত্মানি সামরিক জানত্মা ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদর, আলসামস এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যায় মেতে ওঠে। দেশকে মেধাশূন্য করে এসব শ্রেষ্ঠ সনত্মানদের লাশ ফেলে রাখে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে। তাদের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। অসংখ্য লাল ইটের সমন্বয়ে তৈরি এই সৌধ আমাদের বেদনার্ত স্মৃতি জাগানিয়া স্মৃতিফলক। সৌধের মাঝে আয়তাকার জানালার মতো একটি অংশ রয়েছে। সামনে থেকে দেখলে লাল ইটের মাঝে চোখে পড়বে একটুকরো আকাশ। সৌধের সামনে কৃত্রিম লেক। ওপারে কালো পাথরের তৈরি একটি সত্মম্ভ। বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এটি উদ্বোধন করেন।


স্মৃতিসত্মম্ভ


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ইনডিপেডেন্টস স্কয়ারে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ছাত্র-শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নামফলকসহ নির্মিত স্মৃতিসৌধ একাত্তরের ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এখানে পোড়া মাটির ফলকে চোখ বাঁধা, হাতমুখ বাঁধা ও যুদ্ধরত বীর বাঙালির যুদ্ধের পটভূমি তুলে ধরা হয়েছে।


জাগ্রত চৌরঙ্গী


১৯৭১ সালে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে গাজীপুরের জয়দেবপুর চৌরাসত্মায় জাগ্রত চৌরঙ্গী ভাস্কর্যটির অবস্থান। হাতে গ্রেনেড ও রাইফেল হাতে মুক্তিযোদ্ধা স্মারক ভাস্কর্যটি সিমেন্টের তৈরি। স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ নং সেক্টরে ১৬তম ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের শহীদ সৈনিকদের স্মরণে এটি নির্মিত ভাস্কর্য শিল্পী আব্দুর রাজ্জাক এটি নির্মাণ করেন। এছাড়া গাজীপুরের ভাওয়াল রাজবাড়ি ও টঙ্গীতেও দুটি স্মৃতি ভাস্কর্য রয়েছে।


স্মৃতিস্তম্ভ


ঢাকার কচুক্ষেত বাজারে স্বাধীনতা চত্বরের পাশে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসত্মম্ভটি অত্যন্ত অবহেলা ও অযত্নে রয়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর কালীন সেনাপ্রধান লে. জে. মোহাম্মদ মোসত্মাফিজুর রহমান এটি উদ্বোধন করেন। এটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।


শহীদ মিনার, নারায়ণগঞ্জ


এক সময়ের এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিলস্‌ এর স্বাধীনতাকামী ও মুক্তিপাগল হাজার হাজার শ্রমিকের মধ্যে যারা মুক্তিযুদ্ধে শাহাদতবরণ করেন সেসব সাহসী, ত্যাগী আত্মবিসর্জনকারীদের উদ্দেশ্যে আদমজী নগর শ্রমিক কলোনিতে নির্মিত হয়েছে এই শহীদ মিনার। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় বঙ্গবন্ধু সড়ক মোহনায় আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সত্মম্ভ রয়েছে।


সংশপ্তক


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বারক ভাস্কর্য সংশপ্তক এর অবস্থান। স্বাধীনতার গৌরবদীপ্ত চেতনাকে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত করেছেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান। ভাস্কর্যে যুদ্ধে লোকটির একটি হাত গেছে, সেই সঙ্গে ছিন্ন হয়েছে দুটি পা, তবু তার বিজয়ের প্রত্যাশা। প্রাণপণে লড়ে যচ্ছে সে রাইফেল নিয়ে।


গণকবর, চট্টগ্রাম


মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের ইতিহাস স্বমহিমায় সমুজ্বল। চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে রয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ অসংখ্য সৈনিকদের গণকবর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর সৈনিকদের স্মরণে নির্মিত নাম সংবলিত স্মৃতিফলক। উপরে বাংলাদেশের মানচিত্র সংবলিত এই ফলকের গায়ে অসংখ্য সৈনিকের নাম খোদাই করে লেখা রয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্যটি তৈরি করেন শিল্পী মুর্তাজা বশির। চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে রয়েছে পুলিশ কর্মচারীদের তালিকার নামফলক, বিডিআরদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি অম্লান, রেলওয়ের যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের স্মরণে ফয়েজ লেক এর পাড়ে নির্মিত শহীদ স্মরণে ১৯৭১ স্মৃতিসত্মম্ভ, ষোল শহরে বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি স্মৃতি সত্মম্ভ এবং চট্টগ্রাম নগরীর বিপ্লব উদ্যানে প্রতিষ্ঠিত বাংলার বিজয় শীর্ষক ভাস্কর্য। নগরীর খুলশী এলাকায় রয়েছে বধ্যভূমির উপর নির্মিত একটি স্মারক ভাস্কর্য। তবে এটি সম্পূর্ণ নয় বলে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দাবী। কারণ এই স্থানে অনেক অংশ জুড়ে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধার লাশের চিহ্ন। চট্টগ্রাম দেওয়ানজী পুকুরপাড়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় একটি স্মৃতিসত্মম্ভ গড়ে তোলা হয়েছে। হালিশহরের নাথ পাড়ায় রয়েছে একটি স্মৃতিসত্মম্ভ যা নির্মান করেছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিট্রাস্ট। এছাড়া রয়েছে নগরীর লালখান বাজাওে একটি স্মৃতিসত্মম্ভ দেখা যায়।


দুর্জয় ভৈরব


ঢাকা-সিলেট, ভৈরব-কিশোরগঞ্জ মহাসড়ক মোহনায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কিশোরগঞ্জে নির্মিত হয়েছে দূর্জয় ভৈরব। লাল ইটের উপর চমকার এই ভাস্কর্যটি অনেকটা অযত্নে অবহেলায় রয়েছে। এছাড়া আশুগঞ্জ জিয়া সার কারখানার প্রধান ফটকের সামনে শহীদদের স্মরণে স্মারক ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। রাইফেল হাতে ধরা সিমেন্টের তৈরী এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন শিল্পী হামিদুজ্জামান খান।


স্মৃতিসৌধ, সিলেট


একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সিলেটের এমসি কলেজে স্থাপিত আর্মি ক্যাম্পে শত শত নিরাপরাধ বাঙালিকে পাক সেনারা ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। কলেজের পেছনে এসব লাশ বিরাট গর্ত করে পুঁতে রাখে বর্বর পাকবাহিনী। এসব মানুষের স্মৃতি রক্ষার্থে সিলেট সরকারি কলেজের প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয়েছে শহীদ স্মৃতিসৌধ। এছাড়া তামাবিল সড়কের পাশে হাশিম মার্কেটে, জৈনত্মাপুর থানার কোয়াইঘর চিকনাগুল বাগানেও রয়েছে অন্য দুটি স্মৃতিসৌধ।


স্মৃতিসৌধ, হবিগঞ্জ


হবিগঞ্জ জেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানে অসংখ্য শহীদদের স্মরণে গড়ে তোল হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ। তেলিয়াপাড়া চা বাগানে , ৩ ও ৪নং সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে এটি নির্মিত হয়। এটি উদ্বোধন করেন সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ।


শহীদ স্মরণে, সুনামগঞ্জ


১৯৭১ সালের ৩১ আগষ্ট। সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানার শ্রীরামসী গ্রামের শতাধিক স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষকে মিটিংয়ের অজুহাতে ডেকে আনা হয়। মিথ্যে মিটিংয়ের নামে ডেকে এনে ব্রাশফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় নিরীহ গ্রামবাসীদের। পাক হানাদার বাহিনীর সহযোগী এ দেশের দালাল রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর সহায়তায় এদের হত্যা করা হয়। পরে বাজার সংলগ্ন স্কুল প্রাঙ্গণেই গর্ত করে এদের গণকবর দেয়া হয়। এই হৃদয়বিদারক স্মৃতি রক্ষার্থে শহীদদের নামের তালিকাসহ নির্মিত হয়েছে শহীদ স্মরণে নামে এই স্মৃতিসত্মম্ভটি।


শহীদ সাগর, নাটোর


১৯৭১ সালের মে মাসে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিসত্মানি সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আলবদর পান্ডারা মিলে নাটোর থানার লালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের কর্মকর্তা কর্মচারী ও আশপাশের নিরস্ত্র মানুষদের ধরে এনে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থানটির নামকরণ করা হয়েছে শহীদ সাগর। এখানেই নির্মিত হয়েছে নর্থবেঙ্গল সুগার মিল শহীদ স্মৃতিসত্মম্ভ।


সাবাস বাংলাদেশ


একাত্তরে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য সাবাস বাংলাদেশ গড়ে তোল হয়েছে। সিমেন্টের এই ভাস্কর্যটি তৈরি করেন সদ্য প্রয়াত শিল্পী নিতুন কুণ্ডু। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদদের স্মৃতি সংবলিত নামফলক ও স্মৃতিসৌধ রয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহী বিভাগের শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলক সংবলিত আরেকটি শহীদ মিনার রয়েছে।


স্মৃতি অম্লান, রাজশাহী


রাজশাহী শহরের ভদ্রার মোড়ে অনেক উচ্চতায় লাল ইটের তৈরী ৩০টি ছিদ্র বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধটির অবস্থান। এছাড়া রাজশাহী কোর্ট প্রাঙ্গণেও শহীদদের স্মরণে নামফলক সংবলিত আরেকটি স্মৃতি ভাস্কর্য রয়েছে।


স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর শহীদদের সমাধি, যশোর


যশোর ক্যান্টনমেন্ট একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামে শহীদদের সমাধিক্ষেত্রটি নির্মিত। যুদ্ধ চলাকালে আটক বহু মুক্তিযোদ্ধাদের এই স্থানে এনে গুলিতে হত্যা করে মাটি চাপা দেয়া হয়। এই গণকবরের ওপরে সমাধিটি নির্মিত।


শহীদ মিনার, টাঙ্গাইল


বর্বর পাকসেনারা স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাস টাঙ্গাইলের বিভিন্ন এলাকায় নিরীহ মানুষকে ধরে এনে বংশাই নদীর তীরে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে পানিতে ফেলে দিত। এসব শহীদদের স্মরণে৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারটি নির্মিত।


বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া


ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার কেল্লাপাথর গ্রামে এই কবরস্থানটি অবস্থিত। স্বাধীনতা সংগ্রামে ৪৯ জন বীর সনত্মানকে এখানে সমাহিত করা হয়।


মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ, মেহেরপুর


মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নাম বদলে এখানকার নাম মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। মুজিবনগরেই ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধটি নির্মিত।


গল্লামারী স্মৃতিসৌধ, খুলনা


খুলনা শহরের গল্লামারী নামক স্থানে মুক্তিযুদ্ধের সময় শত শত নিরাপরাধ মানুষকে পাক আর্মি ও রাজাকারেরা নির্মমভাবে হত্যা করে। গর্ত করে সব লাশ পুঁতে ফেলা হতো এই বধ্যভূমিতে। এখানে গড়ে তোলা হয়েছে গল্লামারী স্মৃতিসৌধ।