চাঁদ নিয়ে অনেক গান কবিতা গল্প রচিত হয়েছে। বিশেষ করে বাঙালির অনেক আবেগ জড়িয়ে আছে চাঁদকে নিয়ে। চাঁদ কখনো ঝলসানো রুটি, কখনো চাঁদ প্রিয়তমার মতো সুন্দর। চাঁদকে স্বাক্ষী রেখে গোপন কথা বলা এক সময় প্রচলিত ছিল। অসম্ভবকে সম্ভব বোঝাতে বলা হতো, তোমার জন্য আকাশের চাঁদ এনে দেবো। আবার নেতিবাচক অর্থে বামন হয়ে আকাশের চাঁদ ধরতে চাওয়ার কথাও বলা হতো। একটা সময় চাঁদের কালো দাগ দেখিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের গল্প বলা হতো, ওই যে চাঁদের বুড়ি চরকা কাটছে! আবার একই জিনিসকে দেখিয়ে বলা হতো চাঁদেরও কলঙ্ক আছে। চাঁদ নিয়ে এসব কথা এখন ছোট ছেলেমেয়েরাও বিশ্বাস করবে না। কেননা প্রযুক্তি অনেক এগিয়ে গিয়েছে। এবং চাঁদে মানুষ গিয়েছে তারও ৪০ বছর হয়ে গেল। চাঁদের বুকে নেমে প্রথম অভিযাত্রী নিল আমস্ট্রং বলেছিলেন, একজন মানুষের জন্য এটি একটি পদক্ষেপ মাত্র। কিন্তু মানব জাতির জন্য বিশাল অগ্রযাত্রা।
১৬ জুলাই ১৯৬৯ সালে নভোযান অ্যাপোলো ১১-এ যাত্রা করে ২০ জুলাই ১৯৬৯-এ চাঁদের বুকে নামেন নিল আমস্ট্রং এবং এডউইন অলড্রিন। মাইকেল কলিন্স ছিলেন মূল নভোযানে। এই তিনজনকে নিয়ে পৃথিবীর মানুষ পরবর্তী সময়ে অনেক উল্লাস করেছে। চন্দ্র বিজয়ের পর তারা যখন পৃথিবী ভ্রমণে বের হন তখন এক পর্যায়ে ১৯৬৯ সালে তারা ঢাকাতেও এসেছিলেন। অসংখ্য মানুষ ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দরে ভীড় করেছিল।
চল্লিশ বছরে চাঁদ অভিযান নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। ত্রিশ বছর যেতে না যেতেই কথা উঠেছিল চাঁদে মানুষের অবতরণ ছিল পুরোপুরি বানোয়াট। আমেরিকার একটি দুর্গম স্থানে গিয়ে সেখানে চিত্রধারণ করা হয়েছিল। এর পেছনে অনেক যুক্তিও দেয়া হয়েছে। অবশ্য পরে সে আলোচনা থেমে যায়। মানুষের চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন অনেক আগে থেকেই কাজ করছিল। ১৯৬৯ সালে চাঁদ স্পর্শ করার ১০৪ বছর আগে ১৮৬৫ সালে ফরাশি লেখক জুল ভার্ন চাঁদে অভিযান নিয়ে লিখেছিলেন তার কল্পকাহিনী – ফরম দি আর্থ টু দি মুন। সে সময়ে এ ধরণের চিন্তা করা এবং তার সম্ভাব্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা ছিল অসাধারণ ঘটনা। শত বছর পরে হলেও অনেক মজার মিল ছিল কল্পকাহিনী আর বাস্তবতায়। যেমন জুল ভার্নের নভোযানের কমান্ড মডিউলের নাম ছিল কলাম্বিয়াড। অ্যাপোলো ১১-এর কমান্ড মডিউলের নাম কলাম্বিয়া! দুই ক্ষেত্রেই নভোচারীর সংখ্যা ছিল তিন! আবার দুটো যানই উৎক্ষিপ্ত হয় ফ্লোরিডা থেকে!
কল্পনার সঙ্গে বাস্তবতার কতো মিল। বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছেন মানুষের কল্পনার ওপর। পৃথিবীর মানুষ কল্পনা করছে মহাশূন্যের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাস করবে। জুল ভার্নের কল্পনা যদি ১০০ বছর পর বাস্তব হতে পারে। তাহলে আইজ্যাক আসিমভের কল্পনা বাস্তব হতে দোষ কোথায় ! সেজন্য হয়তো ১০০ বছরও অপেক্ষা করার প্রয়োজন হবে না।
No comments:
Post a Comment